বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০১৭

নিঝুম দ্বীপের আদ্যপান্ত

বঙ্গোপসাগরের কোলো জেগে ওঠা এক নিঝুম অঞ্চল নিঝুম দ্বীপ। প্রথমে স্থানীয় জেলেরা দ্বীপটি আবিষ্কার করে। শীতকালে এখানে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে। জেলেদের ধরা নানারকম মাছ শুকানোর জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান হিসেবে ব্যবহুত হতে থাকে। নিঝুম দ্বীপে ছয়টি বড় বাজার আছে। বাজারগুলিতে প্রধানত চাল-ডাল ও ঔষধের দোকান, মনোহারী সামগ্রীর দোকান ও কিছু খাবারের দোকান আছে। গোটা দ্বীপাঞ্চলে শুধু এই বাজারগুলিতেই জেনারেটর উৎপাদিত বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে আছে সৌর বিদ্যুৎ। বাংলাদেশ সরকারের বন বিভাগ নিঝুম দ্বীপে উপকূলীয় বনাঞ্চল গড়ে তুলেছে। এখানে বনবিভাগের একটি বাংলোও রয়েছে।এখানকার বন এলাকায় প্রায় পাঁচ হাজার চিত্রা হরিণ আছে। গাছগাছালির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য গাছ কেওড়া, যা স্থানীয়ভাবে কেরফা নামে পরিচিত।



প্রায় ১৪,০৫০ একরের দ্বীপটি ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে জেগে ওঠে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের আগ পর্যন্ত কোনো লোকবসতি ছিলো না, তাই দ্বীপটি নিঝুমই ছিলো। বাংলাদেশের বনবিভাগ ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু করে। প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে চার জোড়া হরিণ ছাড়ে। নিঝুম দ্বীপ এখন হরিণের অভয়ারণ্য। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দের হরিণশুমারি অনুযায়ী হরিণের সংখ্যা ২২,০০০। নোনা পানিতে বেষ্টিত নিঝুম দ্বীপ। প্রায় ৯১ বর্গ কিমি আয়তনের নিঝুম দ্বীপে ৯টি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। এই গুচ্ছ গ্রাম ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোটখাটো ঝুপড়ি ঘর। ১৯৯৬ সালের হিসাব অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ৩৬৯৭০.৪৫৪ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
এই দ্বীপে রয়েছে প্রচুর হরিণ, যা বনবিভাগ দেখাশোনা করে। আগামীদিনে নিঝুম দ্বীপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ২০০১ সালে বাংলাদেশ সরকার নিঝুম দ্বীপের বনাঞ্চলকে জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করেছে।নিঝুম দ্বীপে হরিণ এবং মহিষ ছাড়া অন্য কোনো হিংস্র প্রাণী নেই। হরিণের সংখ্যা প্রায় ২২,০০০ (প্রেক্ষাপট ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দ)। নিঝুম দ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এছাড়াও শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথির পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় নিঝুম দ্বীপ। নিঝুম দ্বীপে বিশাল এলাকা পলিমাটির চর। জোয়ারের পানিতে ডুবে এবং ভাটা পড়লে শুঁকোয়। এই স্থানগুলোতে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের বসবাস। জোয়ারের পানিতে বয়ে আসা বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এদের একমাত্র খাবার। এখানে রয়েছে মারসৃপারি নামে একধরনের মাছ যাদেরকে উভচর প্রাণী বলা হয়। ৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে এই মারসৃপার, ৬-৯ ইঞ্চি লম্বা হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত। এই সময় ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা নিঝুম দ্বীপে মাছ কিনতে আসে।। এছাড়া শীত কিংবা শীতের পরবর্তী মৌসুমে নিঝুম দ্বীপ চেঁউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এই মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন।
আয়তন
• মোট ১৬৩.৪৫ কিমি২ (৬৩.১১ বর্গমাইল)
• ভূমি ৩৮.৬৫ কিমি২ (১৪.৯২ বর্গমাইল)
• পানি ১২৪.৮১ কিমি২ (৪৮.১৯ বর্গমাইল)
ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন হাতিয়ার উদ্দেশে লঞ্চ ছাড়ে সন্ধ্যা ৬টায়। নিঝুম দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য অবকাশ পর্যটন নির্মাণ করেছে বন বিভাগের বাংলো ছাড়াও নিঝুম রিসোর্ট এবং নামার বাজার মসজিদ কতৃপক্ষ নির্মাণ করেছে মসজিদ বোর্ডিং।অন্যান্য অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ করতে হলে জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করতে হয় নিঝুম দ্বীপের মানুষদের। হাতিয়া, ভোলা কিংবা ঢাকার সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাদেরকে পুরোপুরি জোয়ার ভাটা মেনে চলতে হয়। ঢাকায় যেতে হলে তাদেরকে সকাল ৯ টার (জোয়ার আসার)পর হাতিয়ার উদ্দেশ্য যাত্রা করতে হয়। প্রায় ২-৩ ঘণ্টা সময় পর ট্রলার হাতিয়া পৌঁছায়। অতঃপর পাওয়া যায় ঢাকাগামী লঞ্চ, যেটি প্রতিদিন একবেলা ঢাকার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করে। এই লঞ্চটি বরিশাল এবং ভোলা হয়ে ঢাকায় পৌঁছায় বিধায় নিঝুম দ্বীপের মানুষজন ভোলা কিংবা বরিশালে যেতে পারেন এই লঞ্চে করেই। এছাড়া হাতিয়া কিংবা ঢাকায় আসার জন্য রয়েছে বিকল্প পথ। বন্দরটিলা থেকে নদী পার হয়ে হাতিয়ায় পৌঁছতে হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন যানবাহন পার করে প্রথমে হাতিয়া শহরে তারপর লঞ্চে পার হয়ে মাইজদি অতঃপর ঢাকায় পৌঁছতে হয়।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপের শতকরা ৯৫ জন লোক মারা যায়। তবে ৯১ এর পর এখানকার কোনো লোক সাপের কামড়েও মারা যায়নি। অবশ্য বিরুপ আবহাওয়ায় গভীর সমুদ্রে জেলেদের নৌকাডুবির কিছু ঘটনা রয়েছে। যদিও আশংকা করা হয় যে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের কিছু অংশ যদি ডুবে যায় তাহলে নিঝুম দ্বীপ সে আওতায় পড়বে। তবে বাস্তবতা হলো নিঝুম দ্বীপের অদূরে বদনার চর এর পাশে গড়ে উঠছে আরেক বাংলাদেশ। ভাটির সময় জেগে উঠে বিশাল ভূমি। ধারণা করা হয় এর আয়তান ৬০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। সাম্প্রতিক কালে সরকার চেঙ্গারচরে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসার রোহিঙ্গাদের পূর্নবাসন করার উদ্যোগ নিয়েছে।

কেন যাবেন নিঝুম দ্বীপে


এখানে আপনি একই সাথে পাবেন বন, সমুদ্র এবং দ্বীপ তিন ধরনের ল্যান্ড স্কেপ। আপনি সেন্টমার্টিন দ্বীপের মতো অনুভূতি পাবেন কারণ এটা চারদিক সমুদ্রবেষ্টিত। (এখানে শুধু প্রবাল পাথর নেই) আপনি সুন্দরবনের ফিলিংস পাবেন কারণ এখানে ম্যানগ্রোভ বন ও প্রচুর হরিণ দেখা যায় (তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার নেই) এখানে ঢাকা থেকে আপনার পথ কমে যাবে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অর্ধেক। তবে সময় কমবেনা। ক্যাম্পিং হতে পারে খুব মজার একটা আইডিয়া। আপনাকে ক্যাম্পিং এর জন্যে স্থান নির্বাচনে তেমন চিন্তা ভাবনা করতে হবে। পুরো দ্বীপেই প্রায় সব জায়গায় আপনি ক্যাম্পিং করতে পারেন চাইলে। যতটুকু জানি নিরাপদই দ্বীপে ক্যাম্পিং করা স্থানীয়দের সাথে কথা বলে তাই মনে হয়েছে।
জেনে রাখা ভালো।
শুধুমাত্র রবি এবং গ্রামীনফোন এর নেটওয়ার্ক পাবেন। আমি কাউকে জিজ্ঞেস করি নাই তাই বোকার মত ধরা খেয়েছিলাম আমার ফোনে নেটওয়ার্ক ছিল না। তাই যাবার আগে এই দিকে খেয়াল রাখা উচিত । বিদ্যুতের ঘাটতি আছে দ্বীপে শুধুমাত্র রাতে বাজারে সোলারে চার্জ দিতে পারবেন। তাই পাওয়ার ব্যাংক নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
মোটর সাইকেল ওয়ালারা নিঝুম দ্বীপে নামার সাথে সাথে ঘিরে ধরে , ভুলেও এদের নিয়ে কোন হোটেলে যাওয়া উচিত না। একসময় নিঝুম দ্বীপের মানুষের সেবা ও উপকারী মানসিকতা এখন দেখা যায়না। পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা পর্যটন বিকশিত হলে যখন বাইরের মানুষ আসতে শুরু করে তখন স্থানীয় লোকেরা টাকা কামাইয়ের ধাণ্ধা করে।

ঢাকা /চট্রগ্রাম থেকে কিভাবে যাওয়া যায়?


ঢাকা থেকে নিঝুমদীপে ২ ভাবে যাওয়া যায় -
সদরঘাট থেকে লঞ্চে করে এবং
ট্রেন বা বাসে নোয়াখালী হয়ে।
বাসে করে গেলে প্রথমে একুশে অথবা ইকোনো পরিবহনের বাসে যেতে হবে নোয়াখালীর সোনাপুরে, প্রতিদিন মোটামুটি সকাল দুপুর ও সন্ধ্যায় সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর এর দিকে বাস ছেড়ে যায়, আবার ধানমন্ডি জিগাতলা কাউন্টার থেকে ফকিরাপুল হয়ে একুশে পরিবহনের বাস ছাড়ে রাত ১০.২০ মিনিট। 
আপনি ট্রেনে যেতে পারেন নোয়াখালীর মাইজদি পর্যন্ত। ঢাকা কমলাপুর থেকে বৃহস্পতি বার বাদে, প্রতিদিন বিকাল ৪.২০ মিনিট এ ৭১২ নং আন্তঃনগর উপকুল এক্সপ্রেস নোয়াখালী এর দিকে ছেড়ে যায়, মাইজদি পৌঁছে রাত ১০.২২ মিনিট। ভাড়া - স্নিগ্ধা - ৫০৩ টাকা, প্রথম চেয়ার - ৩৫৫ টাকা, শোভন চেয়ার - ২৭০ টাকা, শোভন - ২৩০ টাকা।
নোয়াখালীর সোনাপুর / মাইজদি থেকে লোকাল বাস বা সিএনজিতে করে, সি এন জি সারাদিন চলে ভাড়া জনপ্রতি ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা, নামতে হবে বয়ার চর - চেয়ারম্যান ঘাটে।
চেয়ারম্যান ঘাট থেকে সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পীড বোট ছাড়ে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে, সি-ট্রাক ছাড়ে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় নম্বর-০১৭৫৬৮৪৬১০৬ এখন যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বন্ধ আছে ভাড়া জনপ্রতি - ৮০ টাকা, ট্রলার - ১২০ - ১৫০ টাকা ভাড়া প্রতিজন ও স্পীড বোট জনপ্রতি ভাড়া - ৪০০-৫০০ টাকা। যাত্রীদেরকে নামাবে হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে, নলচিরা থেকে বেবিটেক্সিতে (৬০০-৭০০) করে যেতে হবে মোক্তারিয়া ঘাটে, সরাসরি নলচিরা ঘাট থেকে মোটর সাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাট এ যাওয়া যায় ভাড়া দুই জন ৩৫০ - ৪৫০ টাকা, দর দাম করে নিবেন। সেখান থেকে ট্রলারে ১৫ মিনিট লাগবে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে ভাড়া জনপ্রতি - ১০ টাকা। এরপর আপনি যদি নামার বাজার থাকেন তবে ভ্যান/রিক্সা/মোটর সাইকেল এ যেতে হবে। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা মটরসাইকেল দুইজন। বন্দর টিলায় ও থাকতে পারেন আপনি তবে নামার বাজার থাকা বেস্ট। নলচিরা থেকে নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট যাওয়ার ফিরতি সী ট্রাক ছাড়ে সকাল ১১ টায়।
লঞ্চে গেলে ঢাকার সদরঘাট থেকে যেতে হবে - ঢাকা থেকে হাতিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রতিদিন ১ টা লঞ্চ বরাদ্দ রয়েছে - দুইটা লঞ্চ রোটেশন পদ্ধতিতে ডেইলি ১ টা করে ছেড়ে যায়, প্রতিদিন বিকাল ৫.৩০ মিনিট, লঞ্চ ১ মিনিট ও লেট করে না, বি কেয়ার ফুল। আমি একবার মিস করেছিলাম। একটার নাম "এম.ভি ফারহান - ৩" অন্যটা "এম.ভি ফারহান - ৪"। দুইটাই লাক্সারিয়াস লঞ্চ। একদম নতুন লঞ্চ। এদের মধ্যে প্রতিদিন ১টা করে লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশ্যে সদরঘাট থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টায় ছেড়ে যায়। সেটি কালিগঞ্জ (মেহেন্দীগঞ্জ) - বিশ্বরোড (ভোলা) - দৌলত খাঁ (ভোলা) - মির্জাকালু - শরাশগঞ্জ - ভোলা তজুমুদ্দিন - মনপুরা (রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট) হয়ে হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটে পৌঁছবে পরদিন সকাল ৮-৯ টায়। আপনাকে নামতে হবে হাতিয়ার তমুরদ্দী ঘাটে । (ঢাকায় ফেরত যাবার লঞ্চ ছাড়ে দুপুর ১২ টায়)
এম.ভি ফারহান ৩- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৬। এম.ভি ফারহান ৪- ০১৭৮৫৬৩০৩৬৮, ০১৭৮৫৬৩০৩৬৯, ০১৭৮৫৬৩০৩৭০।
কোন কারনে ফারহান ৩/৪ লঞ্চ মিস করলে বিকাল ৬.৩০ মিনিট এ সম্পূর্ণ নতুন ভাবে চালু করা এম ভি টিপু-৫ অথবা এম ভি পানামা লঞ্চ এ করে তজুমুদ্দিন অথবা মনপুরা নেমে গিয়ে ফারহান লঞ্চ ধরতে পারবেন অথবা মনপুরা থেকে ট্রলার এ হাতিয়া যেতে পারবেন। এই লঞ্চ দুটো এই রুটে চলেঃ
ঢাকা - চাঁদপুর - কালিগঞ্জ (মেহেন্দীগঞ্জ) - বিশ্বরোড (ভোলা) - দৌলত খাঁ (ভোলা) - মির্জাকালু - শরাশগঞ্জ - ভোলা তজুমুদ্দিন - মনপুরা (রামনেওয়াজ লঞ্চ ঘাট) ও মনপুরা হাজির হাট লঞ্চ ঘাট।
বিশেষ কারনে যদি এই দুটো অর্থাৎ টিপু -৫ বা পানামা লঞ্চ ও মিস করেন তবে বিকাল ৬.৩০ মিনিট (তবে এরা ছাড়তে একটু লেট করে সদরঘাট এ খুজে দেখুন ৬.৪৫ এর আগে ছাড়ে না) এম ভি ফারহান-৬ অথবা ফারহান-৭ লঞ্চ এ করে তজুমুদ্দিন গিয়ে ফারহান - ৩/৪ লঞ্চ ধরতে পারবেন অথবা তজুমুদ্দিন থেকে ট্রলার এ হাতিয়া যেতে পারবেন। এম ভি ফারহান - ৬ অথবা ফারহান - ৭ লঞ্চ দুটো এই রুটে চলেঃ
ঢাকা-ফতুল্লা-কালিগঞ্জ(মেহেন্দীগঞ্জ)-বিশ্বরোড (ভোলা)-দৌলত খাঁ (ভোলা)-মির্জাকালু-শরাশগঞ্জ-ভোলা তজুমুদ্দিন-শরশী সী-ট্রাক ঘাট-মঙ্গল শিকদার- বেতুয়া (চরফ্যাশন)।
আপনাকে নামতে হবে তজুমুদ্দিন লঞ্চ ঘাট ।
৬ টা লঞ্চ একি মালিকের লঞ্চ। যে কোন নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
লঞ্চে গেলে ভাড়া পড়বে- ডেকে ৩৫০ টাকা, ২৫০ টাকা দিয়াও যাওয়া যায়। কেবিন সিঙ্গেল- ১২০০ টাকা, ডাবল-২২০০ টাকা, ভিআইপি - ভাড়া জানি না ---- হাতিয়া এর তমুরদ্দী ঘাট পর্যন্ত।
এরপর নিঝুমদীপের জন্য আবার মানিব্যাগে হাত দিতে হবে।
তমুরদ্দী ঘাট থেকে বেবি টেক্সিতে (৫০০-৬০০ টাকা) সরাসরি মোক্তারিয়া ঘাট এ যাওয়া যায় অথবা সরাসরি মোটর সাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাট এ যাওয়া যায় ভাড়া দুই জন ৩০০ - ৩৫০ টাকা, দর দাম করে নিবেন। সেখান থেকে ট্রলারে ১০ মিনিট লাগবে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে ভাড়া জনপ্রতি - ১০ টাকা। এরপর আপনি যদি নামার বাজার থাকেন তবে ভ্যান/রিক্সা/মোটর সাইকেল এ যেতে হবে। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা মটরসাইকেল দুইজন।। বন্দর টিলায় ও থাকতে পারেন আপনি তবে নামার বাজার থাকা বেস্ট। প্রতিদিন সকাল ১০ টায় তমুরদ্দি থেকে ফিশিং ট্রলার সরাসরি নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার যায় কপাল ভালো থাকলে এবং এডভেঞ্চার প্রিয় হলে যেতে পারেন মেঘনা নদীর বুক চিরে ট্রলার এ নিঝুম দ্বীপে ভাড়া যার কাছে যেমন রাখে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া আপনি ট্রলার রিজার্ভ করতে পারেন নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার ভাড়া ট্রলার সাইজ অনুযায়ী ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।
চট্রগাম থেকে হাতিয়া আসতে হলে, চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়াগামী জাহাজ এম ভি বার আওলিয়া অথবা এম ভি আব্দুল মতিন এ উঠে হাতিয়ার নলচিরা ঘাট এ নামতে হবে। আরেকটা নতুন শীপ নাকি দিয়েছে সাম্প্রতিক, টাইম টেবিল জানি না।
শুক্র ও রবিবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮.৩০ এ চট্টগ্রাম সদরঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে যায় হাতিয়ার উদ্দেশ্যে। সন্দীপ হয়ে হাতিয়া পৌছে বিকাল ৫ টায়।
এ ভ্রমণে একই সাথে বঙ্গোপসাগর ভ্রমণ এবং সন্দীপ ও হাতিয়া দেখা হয়ে যাবে। আবহাওয়া খারাপ থাকলে কিছুটা রোলিং হয় কিন্তু এ ভ্রমণটা ১০০% নিরাপদ।

 
সময়সূচী :


প্রতিদিন সকাল ৯ টা (শুক্র ও রবিবার বাদে)
স্থান : চট্টগ্রাম সদরঘাট
ভাড়া : প্রথম শ্রেনী/ দ্বিতীয় শ্রেনী/ চেয়ার ক্লাশ
সন্দীপ : ১২০০/- ৬২০/- ২৩০/-
হাতিয়া : ২২১৫/- ১১১০/- ৩৫০/-

কোন ঋতুতে গেলে কি কি সুবিধা/অসুবিধা?


অক্টোবর থেকে এপ্রিল ১৫ তারিখ এখনকার আবহাওয়া অনুযায়ী নিঝুম দ্বীপ ভ্রমনের জন্য বেস্ট। অন্য সময় বর্ষা থাকে ও ঝড়ের কারনে মেঘনা নদী ও সাগর উত্তাল থাকে।
বর্ষাকালে গেলে পুরা হাটু সমান কাদা পাবেন + পুরা দ্বীপের এমাথা ও মাথা আপনাকে হেঁটে পার হতে হবে, রাস্তায় কিছু চলতে পারবেনা, কাদাতে দেবে যাবে। তবে মাছ খেতে পারবেন প্রচুর, ইলিশ তো হাতের এপিঠ ও পিঠ...শীত কালে গেলে রাস্তাঘাট সব ভালো পাবেন, খালের মধ্যে পানি কম পাবেন, ফলে বনের মধ্যে যেকোনো জায়গায় যেতে পারবেন, বিকেলে হরিণের পাল দেখতে পারবেন, সি-বিচ টা অনেক শুকনো পাবেন, সাগর বলতে মেঘনা নুদী নীল পাবেন -- সমস্যা একটাই তখন খাবারের দাম অনেক বেড়ে যাবে। শরতকাল আর বসন্তকাল বেস্ট...
খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আর খরচ?
নিঝুম দ্বীপে নামার সাথে সাথে মোটর সাইকেল ওয়ালা রা আপনাকে ঘিরে ধরবে, তাদের নিয়ে যাওয়া কোন হোটেল এ যাবেন না।
১. নিঝুম রিসোর্ট (অবকাশ হোটেল) নামার বাজারঃ এটা অবকাশ পর্যটন লিমিটেড এর একটা রিসোর্ট। নামার বাজার সী বীচ এর কাছে অবস্থিত। নিঝুম রিসোর্ট নামে নিঝুম দ্বীপে থাকার জন্য একটি ভালো মানের রিসোর্ট। এর ম্যানেজার সবুজ ভাই অত্যান্ত ভালো মানুষ। খুব ই হেল্প ফুল এন্ড ফ্রেন্ডলি। আমি সব সময় সাজেস্ট করি এখানে থাকার জন্য।
এখানে ২ বেড এর VIP রুম ভাড়া ২০০০ টাকা, ২ বেড এর Executive রুম ভাড়া ১৫০০ টাকা, ৩ বেড এর Executive রুম ভাড়া ১৮০০ টাকা, ৪ বেড এর Executive রুম ভাড়া ২০০০ টাকা, ৫ বেড এর ফ্যামিলি রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা এবং ৫ বেড এর ডরমেটরি রুম ভাড়া ১৮০০ টাকা ও ১২ বেড এর ডরমেটরি রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা।
সব গুলো রুম এ এটাচ বাথ রুম আছে।
ডরমেটরি রুমে এক্সট্রা প্রতি জন থাকলে ২০০ টাকা করে দিতে হবে।
দুপুর ১২ টার আগে চেক আউট করতে হবে।
অফ সিজনে রুম ভাড়ায় ৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায় ( এপ্রিল ১৫- সেপ্টেম্বর ৩০ )। আমার কথা বললে ৬০-৭০% পাবেন।
জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ পাবেন সন্ধ্যার পর থেকে রাত ১০.৩০ পর্যন্ত। এছাড়া সারা রাত লাইট ইউজ করতে পারবেন সোলার প্যানেল থেকে। এছাড়া সারাদিন ১-২ ঘন্টা পর পর ৩০ মিনিট এর জন্য বিদ্যুৎ পাবেন।
যোগাযোগঃ ঢাকা অফিসঃ অবকাশ পর্যটন লি., আলহাজ সামসুদ্দিন ম্যানসন (নবম তলা), ১৭ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। ফোন : ৮৩৫৮৪৮৫, ৯৩৪২৩৫১, ৯৩৫৯২৩০, ০১৫৫২৩৭২২৬৯।
নিঝুম দ্বীপ অফিসঃ
সবুজ ভাইঃ ০১৭২৪-১৪৫৮৬৪, ০১৮৪৫৫৫৮৮৯৯ , ০১৭৩৮২৩০৬৫৫
২. হোটেল শাহিন, নামার বাজার। হোটেল টা নতুন। কিন্তু এর মালিক কর্মচারী গুলা সাক্ষাত ডাকাত ১০০০ টাকার রুম ২৫০০ টাকা চাইবে। যাই হোক ফোন নম্বরঃ ০১৮৬৩১৫০৮৮১
৩. মসজিদ বোর্ডিং, নামার বাজার। এটা সবচেয়ে সস্তায় থাকার ব্যবস্থা। স্থানীয় মসজিদ থেকে এই ব্যবস্থা করেছে, এক্সট্রা দুটা সিঙ্গেল এবং দুটা ডবল রুম আছে, আর সব ডরমেটরি । ডরমেটরি - ভাড়া ২০০ - ৩০০ টাকা। এই বোর্ডিং-এ কোনো এটাচ্ট বাথরুম এবং জেনারটরের ব্যবস্থা নাই। এখানে ২টি কমন বাথরুম এবং একটি টিউবওয়েল আছে।
এই বোর্ডিং-এ থাকার জন্য বুকিং করতে যোগাযোগ করুন: মোঃ আব্দুল হামিদ জসিম, কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, নামার বাজার, হাতিয়া, নোয়াখালী। ফোনঃ ০১৭২৭-৯৫৮৮৭৯
৪. নিঝুম ড্রিম ল্যান্ড রিসোর্ট, বন্দরটিলা। এইটা নতুন উদ্বোধন হয়েছে এই বছরেই। পরিবেশ টা ভালোই। 
যোগাযোগঃ
ঢাকা বুকিং অফিসঃ
০১৮৪৭১২৩৫৭৩ নিঝুমদ্বীপ বুকিং অফিসঃ০১৮৪৭১২৩৫৭২
৫. হোটেল দ্বীপ সম্পদ, (সৈয়দ চাচার থাকা ও খাওয়ার হোটেল) নামার বাজার। ফোনঃ ০১৭২০ ৬০১ ০২৬, ০১৭৬০ ০০৮১০৬।
৬. হোটেল শেরাটন, বন্দরটিলা বাজার ।
৭. জেলা প্রশাসন ডাক বাংলো।

দর্শনীয় স্থান


১. কমলার দ্বীপ। সেখানের কমলার খালে অনেক ইলিশ মাছ পাওয়া যায় :Dএছাড়াও আশে পাশের দ্বীপগুলো সুন্দর :) পুরো দ্বীপটা হেঁটে হেঁটে ঘুরে আশা যায়, মন ভরে যাবে...!!
২. চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর । যেতে হবে বিকেল এ সন্ধ্যার আগে, চৌধুরীর খাল নেমে ঘন্টা খানেক হাঁটলেই বনের মধ্যে হরিন এর পালের দেখা পেতে পারেন। একটা ট্রলার রিজার্ভ নিন ১০-১৫ জনের গ্রুপ এর জন্য ১০০০-১২০০ টাকা ওরাই হরিন দেখিয়ে আনবে, সন্ধ্যার সময় কবিরাজের চর এ নেমে সূর্যাস্ত ও হাজার হাজার মহিষের পাল দেখতে ভুলবেন না।
৩. চোয়াখালি ও চোয়াখালি সী-বিচ । চোয়াখালি তে গেলে খুব সকালে হরিন দেখা যায় । মটর সাইকেল ওয়ালাকে বলে রাখুন খুব সকালে আপনাকে হোটেল থেকে নিয়ে হরিন দেখিয়ে আনবে । আমাদের মত লাক ভালো থাকলে সকাল ৫ টায় ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতে নিঝুম রিসোর্ট এর বারান্দা থেকেও হরিন দেখতে পারবেন ২/৪ পিস :D
৪. ম্যানগ্রোভ বন । নিঝুম দ্বীপ বনায়ন প্রকল্প । নিঝুম দিপে ছোট ছোট পোলাপাইন রা গাইড এর কাজ করে, এদের সাথে নিয়ে সকাল বেলায় বনের ভেতর ঢুকে পড়ুন। হরিন দেখতে পারবেন।
৫. নামার বাজার সী-বিচ। নামার বাজার থেকে হেঁটে যেতে ১০ মিনিট লাগে। এখান থেকে সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পাবেন, এখানে বারবিকিউ করে মজা পাবেন।
৬. দমার চর । এই চরের দক্ষিন দিকে নতুন একটা সী বিচ আছে যাকে বলে "ভার্জিন আইসল্যান্ড" । এখানে অনেক নাম না জানা পাখির দেখা পাবেন খুব সকালে যদি যান। অনেক টুরিস্ট দের কাছে এখনও অজানা এই জায়গাটা। ট্রলার ভাড়া ৩০০০-৩৫০০ টাকা।
ট্রলার এর মাঝির নম্বরঃ জাকির - ০১৭৮৭ ৬০৫ ৪৪৪ (ভালো মানুষ তবে ভাড়া একটু বেশি চায়, নিঝুম রিসোর্ট এর ম্যানেজার সবুজ ভাইয়ের হেল্প নিয়ে ভাড়া ঠিক করে ফেলুন)।
আপনি যদি হাতে সময় নিয়ে যান তবে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে ভোলার ঢালচর, চর কুকরি - মুকরি থেকে ঘুড়ে আসতে পারেন।

ক্যাম্পিং এর সুবিধা


ক্যাম্পিং এর সুবিধা ভরপুর :) পুরা দ্বীপে যেখানে মন চায় সেখানেই তাঁবু টাঙ্গানো যাবে, জন্তু জানোয়ারের কোনো ভয় নাই, শুধু বুনো মহিষ থেকে সাবধান। সবচাইতে ভালো যায়গা হলো উঁচার বাজারের পাশের খাল পার হয়ে সাগর পাড়ের বিশাল (৫/৬ মাইল) খোলা ঘাসের মাঠটা...
কি কি জিনিস সাথে নেয়া প্রয়োজন?
তেমন কিছুই নেয়া লাগবে না, সব-ই পাওয়া যাবে, এরপরও যদি কিছু লাগে তাহলে জাহাজমারা বাজারে পাওয়া যাবে।

আরও কিছু প্রশ্নঃ

১) ঢাকায় বাস কোথা থেকে ছাড়ে?
ঢাকায় বাস ছাড়ে মিরপুর ১০ (বিলাস), গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে। মিরপুর থেকে রাত ১০.৩০, গাবতলী থেকে রাত ১০ টা ও সায়েদাবাদ থেকে প্রায় সবসময়ই।
২) নোয়াখালির অন্য কোন বাস সার্ভিসে যাওয়া যায় কিনা?
নোয়াখালীর অনেক বাস রয়েছে - শাহী, হানিফ, শ্যামলী, বিলাস ছাড়াও আরো অনেক... সায়েদাবাদে একটু খুজলেই নতু ন নতুন বাস আবিষ্কার করা যাবে :)
৩) বাস এ ঢাকা থেকে নোয়াখালির সোনারপুর যেতে কত সময় লাগে আর ভাড়া কত?
বাসে গেলে ঢাকা থেকে সোনাপুর যেতে ৫/৬ ঘন্টা সময় লাগবে, সকালে (ভোরে ভোরে যাওয়াই ভালো)। ভাড়া নিবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে।
৪) সোনারপুর থেকে চর জব্বার যাওয়ার লোকাল সার্ভিস কোথায় পাওয়া যাবে, যেতে কত সময় লাগবে আর ভাড়া কত?
সোনাপুর বাসস্ট্যান্ডেই চরজব্বার এর গাড়ি পাওয়া যাবে। সোনাপুর থেকে চরজব্বারে যেতে মিনিমাম আড়াই ঘন্টা লাগবে।
৫) সোনারপুর থেকে সিএনজি তে চর জব্বার যেতে কত সময় লাগে?
সিএনজিতে গেলে প্রায় ২ ঘন্টা লাগার কথা, রাস্তা খুবই ভালো। (২০০৯-এ ছিলো)
৬) চর জব্বার এ সী ট্রাক বা ট্রলার এর টাইম সিডিউল আছে কিনা? রিজার্ভ করা যায় কিনা? লোকাল ভাড়া কত? রিজার্ভ করলে কত? কত সময় লাগে?
সি-ট্রাক জোয়ার ভাটার উপরে নিরভর করে ছাড়ে, বেস্ট টাইম হলো দুপুর ১২.৩০ থেকে ২.৩০ পর্যন্ত। সোনাপুরে নেমে একটু কস্ট করে জেনে নিতে হবে যে আজকে সি-ট্রাক কখন ছাড়বে। এছাড়া ট্রলার প্রতি ২ ঘন্টা পর পর ছাড়ে, বিকাল ৫ টার পর আর কোনো ট্রলার যায় না। সি-ট্রাক এবং ট্রলারে করে গেলে নামতে হবে হাতিয়ার একেবারে উত্তর মাথায় - নলচিরা ঘাটে। ট্রলার রিজার্ভ করা যাবে, ভাড়া শিউর জানি না :( তবে পার পারসন প্রায় ৬০ - ৮০ টাকার মত নিবে...ট্রলারে করে গেলে ৩ ঘন্টার মতন লাগে আর সি-ট্রাকে গেলে আড়াই ঘন্টা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন