শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

মাত্র ২৫০০ টাকায় ঘুরে আসলাম টাঙ্গুয়ার হাওর!

মাত্র ২৫০০ টাকায় ঘুরে আসলাম টাঙ্গুয়ার হাওর!
টাঙ্গুয়ার হাওর এমন একটি জায়গা যেখানকার সৌন্দর্য্য আসলে বলে বা লিখে প্রকাশ করা খুব কঠিন।হাওরের নীল পানি,পাহাড় আর আকাশে মেঘের খেলার যে অপরূপ মিস্রণ,তা সত্যিই অসাধারণ।সাথে নীলাদ্রি লেক,লাখমাছড়া,রাজাই ঝর্ণা,বারেকের টিলা,যাদুকাটা নদী।
আমাদের ভ্রমণ রুটঃ
ঢাকা-সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর-টাঙ্গুয়ার হাওর-টেকেরঘাট-লাখমাছড়া-নীলাদ্রি-বাজাই ঝর্ণা-বারেকের টিলা-যাদুকাটা নদী-সুনামগঞ্জ-ঢাকা।



খরচ(জনপ্রতি)ঃ
ঢাকা-সুনামগঞ্জ-ঢাকা ১১০০ টাকা(বাস)
সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর ১০০ টাকা(সিএনজি)
নৌকা ভাড়া ২২০০/৪=৫৫০ টাকা
টেকেরঘাট-সুনামগঞ্জ ৩৫০/২=১২৫ টাকা(বাইক)
খাওয়া ও আনুসাঙ্গিক খরচ ৬২৫ টাকা
মোটঃ ২৫০০ টাকা।
ভ্রমণের বর্ণনাঃ
আমরা মোট চারজন বাসে ঢাকা থেকে শুক্রবার(১৪/৭/২০১৭) রাতে সুনামগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে রওনা দেই।ভাড়া- জনপ্রতি ৫৫০ টাকা।ভোর ৬ টায় বাস থেকে নেমে সকালের নাস্তা সারি।সেখান থেকে সিএনজি করে তাহিরপুর ঘাট। ।সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা।(সিএনজি রিসার্ভ নিলে ৫০০-৬০০ পড়বে।বাইকেও যাওয়া যাবে।ভাড়া বাইকপ্রতি ৩৫০+, এক বাইক এ ২ জন)।বাসস্ট্যান্ড এ শুধু সিএনজি পাবেন।বাইক পাওয়া যাবে বইঠাখালি ব্রীজে।বাসস্ট্যান্ড-বইঠাখালি ব্রীজ অটো ভাড়া-জনপ্রতি ১০টাকা।লোকাল লেগুনা করেও তাহিরপুর যাওয়া যায়।ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা।কিন্তু লেগুনাতে গেলে রাস্তার অসাধারণ ভিউ মিস করবেন।
বৃষ্টির কারণে আমরা সিএনজি তে উঠি ৮ টার পর।তাহিরপুর পৌঁছাই সাড়ে ৯ টার দিকে।তাহিরপুর ঘাটে নৌকা ভাড়া করতে হয়।সেখানে অনেকটা সিন্ডিকেট এর মত অবস্থা।তাই দর কষাকষি খুব গুরুত্বপূর্ণ।মনে রাখবেন খরচ কমাতে চাইলে নৌকা ভাড়া কমানোর বিকল্প নেই।আমরা হাওর এ রাত কাটিয়ে পরদিন সকালে টেকেরঘাট নেমে নৌকা ছাড়ব এই চুক্তিতে মাঝারি নৌকা ভাড়া করি।নৌকাভাড়া ২২০০ টাকা।(সাধারণত বড় নৌকা ভাড়া ৫০০০+,মাঝারি নৌকা ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা পড়ে। রাতে না থাকলে দিনে দিনে ঘুরে আসা যায়।সে ক্ষেত্রে ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা পড়বে।)
দুপুরে আর রাতের খাওয়া-দাওয়া নৌকাতেই হয়।আমরা বাজার সদাই করে নৌকায় উঠে পড়ি।ওয়াচ টাওয়ার গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ লাফালাফি করতে করতে দুপুর হয়ে যায়।পরে ওয়াচ টাওয়ার থেকে ফিরে হাওরের মাঝে দুপুরের খাবার খাই।খাওয়া দাওয়া সেরে বিকালে আমরা মাছ ধরতে যাই।মাছ না পাবার হতাশা কাটাতে মন্দিয়াতা নামের এক গ্রামে যাই চা খেতে।খাওয়া দাওয়া নৌকায় চড়ে।মাছ ধরতে যাই নৌকায় চড়ে।চা খেতে যাই নৌকায় চড়ে।এক কথায় দারুন এক অভিজ্ঞতা।
মন্দিয়াতা গ্রাম টা সুন্দর।সেখানে চা-নাস্তা সেরে রাতে যেখানে থাকব সেখানে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা নামে।খাবার হতে হতে রাত।হাওরের রাত টা অসাধারণ ছিল।হাওরের বাতাস,তারার মেলা,নিঝুম হাওরে ছাড়া গলায় গান।
পরদিন সকালে টেকেরঘাট নেমে আমরা নৌকা ছেড়ে দেই।সেখানে নাস্তা সেরে লাখমাছড়া যাই।টেকেরঘাট থেকে লাখমাছড়া ঝর্ণা যেতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।সেখান থেকে ফিরে যাই নীলাদ্রি লেকে।নীলাদ্রি লেক খুব সুন্দর একটা জায়গা।সেখানে গোসল সেরে ১১.৩০ এর দিকে বাইক স্ট্যান্ড এ যাই।সেখানে রাজাই ঝর্ণা,বারেকের টিলা,যাদুকাটা নদী হয়ে সুনামগঞ্জ এই চুক্তিতে বাইকভাড়া করি।ভাড়া বাইকপ্রতি ৩৫০ টাকা।
রাজাই ঝর্ণা ছোট।তবে এখানে পাহাড়ের মাটি ফুঁড়ে পানি বের হচ্ছে এটি দেখতে পাবেন।মূল ঝর্ণার ডান পাশের রাস্তা দিয়ে একটু উপরে উঠলেই হাতের ডানে মাটির গা ফুঁড়ে পানি আসছে দেখতে পাবেন।পানি খুবই সামান্য কিন্তু আমি এমন এর আগে দেখিনি তাই এখানে মেনশন করলাম।
বারেকের টিলা থেকে পাহাড়ের ভিউ অনেক সুন্দর।আর টিলার গা বেয়েই বইছে যাদুকাটা নদী।যাদুকাটা নদীর পানির রং সাগরের মত নীল।পাড়ে সাগরের মতই বালি।ছবির মতন সুন্দর একটা জায়গা।নদীতে গোসল সেরে আমরা বাইকে করে সুনামগঞ্জ চলে যাই।সেখান থেকে ২.৩০ এর বাসে ঢাকা ফিরি।
যাবার আগে যে সব দিক বিবেচনা করবেনঃ
# সুনামগঞ্জ টাঙ্গুয়ার হাওরের জন্য বিখ্যাত এবং সুনামগঞ্জের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা টাঙ্গুয়ার হাওর।তাই চেষ্টা করুন অন্তত ১ রাত হাওরে কাটাতে,রাতটি আপনার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাতগুলির ১ টি হবে।(তবে একটু সচেতন থাকবেন।মাঝি কে নিরাপদ জায়গায় নৌকা বাঁধতে বলবেন।)
# লাখমাছড়া আর নীলাদ্রি দুটিই টেকেরঘাটে।দুটিই কাছাকাছি জায়গায়।১৫-২০ মিনিটের দূরত্ব।ওদিকে বারেকের টিলার গা বেয়েই যাদুকাটা নদী।আর ওই রাস্তায় যাবার পথে বাজাই ঝর্ণা পরবে।তাই টেকেরঘাট-লাখমাছড়া-নীলাদ্রি-বাজাই ঝর্ণা-বারেকের টিলা-যাদুকাটা নদী, রুটটা খুব বড় মনে হলেও আসলে সব জায়গা ঘুরে শেষ করতে ৫-৬ ঘন্টাও লাগবে না।তাই রুট কভারের টেনশনে তারাহুড়ো করবেন না।
# সাতার পারুন বা না পারুন,অবশ্যই সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখুন।
# খরচ কমাতে চাইলে ঢাকা থেকে রাতে রওনা দিন,পরদিন রাত হাওরে কাটান, পরদিন সব স্পট ঘুরে দুপুরের বাসে বা শহর ঘুরে রাতের বাসে ঢাকা ফিরুন।
# সুনামগঞ্জ শহরে হাছন রাজার বাড়ি এবং সমাধি , নারায়ন তলা , গৈরারং জমিদার বাড়ি , আব্দুল করিমের বাড়ি ছাড়াও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
# সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দুপুরের শেষ বাস দুপুর ২.৩০ এ।এর পরের বাস রাত ৮.৩০ এ।তাই সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় বাসে ফিরতে চাইলে বাস টাইমগুলো খেয়াল রাখুন।
# শুক্রবার দর্শণার্থীদের চাপ বেশি থাকে।তাই শুক্রবার রাতে হাওরে থাকতে চাইলে খরচ একটু বেশি পড়তে পারে।
# ট্রেনে যাতায়াত করলে খরচ আরও কমাতে পারবেন

By Sami Badol

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন